আঞ্চলিক ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে এফটিএ উইং এর কার্যক্রম
বিশ্ব বাণিজ্য নীতির সাথে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য স্বার্থ সংরক্ষণ করে সম্ভাবনাময় ট্রেড পার্টনারদের বাজারে পণ্য ও সেবার অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার অর্জন করা বৈদেশিক বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) অনুবিভাগের প্রধান কাজ। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে ট্রেড নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি, মুক্ত বাণিজ্য আঞ্চল গঠন, শুল্ক সুবিধা নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশের পণ্য ও সেবার জন্য আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণ, অশুল্ক বাধা দূরীকরণের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থ সংরক্ষণে বৈদেশিক বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) অনুবিভাগ কাজ করে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন: UN, EU, UNCTAD, UNESCAP, CFC, D-8, IORA, OIC-COMSEC, ASEM, Cmmonwealth ইত্যাদি এর সাথে যোগাযোগ এবং তাদের গৃহিত বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে থাকে।
এফটিএ অনুবিভাগের সার্বিক কার্যক্রম নিম্নরূপ:
(ক) সকল দ্বি-পাক্ষিক ও আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য এলাকা (FTA) চুক্তি সংক্রান্ত চলমান এবং ভবিষ্যৎ বিষয়াদি;
(খ) SAFTA (বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান, পাক্স্তিান, মালদ্বীপ, আফগানিস্তান), APTA (বাংলাদেশ ভারত, শ্রীলংকা, দঃ কোরিয়া, চীন, লাও-পিডিআর ও মঙ্গোলিয়া) এবং D-8 (বাংলাদেশ, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও তুরস্ক) ভুক্ত দেশসমূহের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়াদি;
(গ) SAARC, SAPTA, SAFTA, BIMSTEC, IORA, D-8, TPS-OIC ও APTA সহ সকল আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাবলি;
(ঘ) সকল Free Trade Agreement (FTA) ও Preferential Trade Agreement (PTA) সংক্রান্ত কার্যাবলি;
(ঙ) তৈরি পোশাক শিল্পের C.O, GSP, GSTP সংক্রান্ত কার্যাবলি এবং রুলস অব অরিজিন সংক্রান্ত কার্যাবলি;
(চ) অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ব্লক: কমনওয়েলথ, G-7, G77, ICDT, IORA, MERCOSUR ইত্যাদি;
(ছ) United Nations Economic and Social Commission for Asia and the pacific (UNESCAP) সংক্রান্ত সকল বিষয়াদি;
(জ) বর্ডার হাট সংক্রান্ত সম্পাদিত চুক্তি উত্তর কার্যক্রম;
(ঝ) চুক্তিভুক্ত দেশসমূহের ক্ষেত্রে সীমান্ত বাণিজ্য, ট্রানজিট বাণিজ্য, ক্রেডিট লাইসেন্স সংক্রান্ত কার্যাদি;
(ঞ) Committee on Economic and Commercial Cooperation among OIC Member State (COMCEC) সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম।
(ট) SASEC (South Asian Sub-regional Economic Cooperation) সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাবলি;
(ঠ) BCIM (Bangladesh China India Myanmar) Forum সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাবলি;
(ড) বাণিজ্য সংক্রান্ত তথ্য ও পরিসংখ্যান সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা; এবং
(ঢ) কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অর্পিত অন্যান্য বিষয়াদি
আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি (আরটিএ) নীতি ২০২২:
বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়শীল দেশে উত্তরণ বর্তমান সরকারের আর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনাতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের বছরে এ অর্জন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। এ অর্জন বিশ্বে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি বিনির্মাণ এবং বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টির পাশাপাশি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি করবে। যার মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে পণ্য রপ্তানিকালে শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা এবং relaxation of country of origin নির্ধারণের শর্ত হারানো অন্যতম। এর ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যকে ঐ সব দেশের বাজারে প্রবেশের সময় সাধারণভাবে আরোপিত শুল্কের সম্মুখীন হতে হবে যার ফলে ঐ সকল দেশে বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার সংকোচনের আশস্কা রয়েছে। এই সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার সংরক্ষণ, সম্প্রসারণ ও বিভিন্ন দেশে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পাওয়ার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সাথে সঙ্গতি রেখে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চললের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (PTA) সহ Regional Trade Agreement (RTA) সম্পাদনের নীতি গ্রহণ করেছে।
বৈদেশিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর সংক্রান্ত বিদ্যমান Free Trade Agreement (FTA) Policy Guideline-টি প্রণয়ন করা হয়েছিলো ২০১০ সালে যা বর্তমান সময়ের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। এই প্রেক্ষাপটে বিদ্যমান নীতিটি যুগোপযোগী করে “RTA Policy 2022” প্রণয়ন করা হয়েছে। RTA Policy 2022- তে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার লক্ষ্যে World Trade Organization (WTO)’র বিভিন্ন চুক্তির আওতায় প্রাপ্ত সুবিধা অব্যাহত রাখা, পণ্য ও সেবা বহুমুখীকরণ, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি, কমপ্লায়েন্স ও স্ট্যান্ডার্ড প্রতিপালন, বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের ব্যাপ্তি, সম্ভাবনাময় দেশ ও ব্লক নির্বাচনে অগ্রাধিকার ও গুরুত্ব এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে নেগোসিয়েশন পরিচালনার কৌশল গ্রহণের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। এর পাশাপাশি, বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের সময় নেগোসিয়েশনের সুবিধার্থে Preferential Trade Agreement (PTA) ও Free Trade Agreement (FTA)- এর Template প্রণয়ন করা হয়েছে।